"প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ঘোষণা আগেই রেখেছিলেন। সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, নারায়ণগঞ্জ যাবেন। ৬৪টি জেলায় সফর করবেন। তিনি আর কেহ নন। প্রচলিত রাজনীতির স্রোতে ভাসতে না থাকা এক নাম। কামরুল হাসান নাসিম। তিনি শুরু করেছেন।
তাই আগামী এনসিসি নির্বাচনকে ঘিরে গঠিত প্যানেল, যারা জয় বাংলা নাগরিক কমিটি নামে সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করে, তাঁদের আয়োজনে সংবর্ধনা সভায় হাজির হতে পারেন নি। কিন্তু তাঁদের তাৎক্ষনিক সংবাদ সম্মেলনে নাসিম উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখা শুরু করেন। যা জয় বাংলার কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। নাসিম এখানেও ধারা ভাঙলেন।
এই সেই নাসিম, যিনি বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা হিসাবেই রাজনৈতিক অঙ্গনে সু পরিচিত। নাসিম এর সাথে অন্যদের তফাৎ তো আছেই। সতেরটি অঙ্গনে কাজ করতে যেয়ে তাঁর মেধা, প্রজ্ঞা প্রকটিত হয় তাঁর কবিত্বে, দার্শনিক মত রাখায়, বক্তৃতায়। নারায়ণগঞ্জেও তাই করলেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনা মোকাবেলার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য চাইলেন একুশে পদক এবং বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীকে স্বাধীনতা পদক প্রদানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে কার্যকরী ভুমিকা রাখার তাগিদ দিয়ে বললেন, এমনটা হতেই হবে।
নাসিম স্পষ্টাকারে বলেন, বিএনপির অবৈধ দুই শীর্ষ নেতৃত্ব বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের ইচ্ছেমত দল পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। তাঁরা আগামীতে নারায়ণগঞ্জ থেকে নাসিক নির্বাচনে যাক বা না যাক, দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়া যেহেতু শেষ হয় নাই, কাজেই একজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুরণিত সৈনিক আমার বন্ধু বাবুকে সমর্থন দিলেও তা দলীয় পরিপন্থী সিদ্ধান্ত হিসাবেও দাঁড় হয় না। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অপশক্তির অনুষঙ্গ হয়েই বিএনপি এখন কথিত রাজনীতি করছে। দলটিকে সুপথে আনতে হবে। নির্দিষ্ট পাঁচটি অসুখ সারিয়ে তুলে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কাজেই যখনই তারেক রহমানেরা অপশক্তি হয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে, আমিই প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়াব। আমি জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণে কাজ করি--- নারায়ণগঞ্জের অনেক বড় নেত্রী আঞ্চলিক স্বার্থ সংরক্ষণ করলেও করতে পারেন। জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের মধ্যে নিশ্চয়ই পার্থক্য আছে, তা বুঝে নেয়ার চেষ্টায় ব্রত হতেও তাগিদ দেন নাসিম।
নাসিম তাঁর বক্তৃতা দিতে যেয়ে নিজের স্বভাবসুলভ কায়দায় ৪টি কবিতা নিয়ে আসেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উৎসর্গ করে ‘বাবা’ কবিতাটি ছিল, ছিল তাঁর আত্মপরিচয়মুলক ‘নীরা শীর্ষক জনপ্রিয় ’কবিতাটিও। জনাকীর্ণ এই সভায় নাসিম নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরেন। ওসমান পরিবারের রাজনীতিকে ইতিবাচক হিসাবে দেখে তাঁদের অবদানকে স্বীকার করেন। একই সঙ্গে তিনি তাগিদ রাখেন যে, বিএনপি বলয়েও একজন শেখ হাসিনাকে দরকার।
নাসিম নারায়ণগঞ্জে যাবার পরে শহরের টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হন। সকলের মুখেই “নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে হঠাতই কেন বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা”, কেন নারায়ণগঞ্জে নাসিমের সভায় জনতার ঢল, ‘আইভিকে কেন কামরুল হাসান নাসিম বললেন, সব কিছু আগের মত করে হবে না--- এসব কিছু নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
নাসিম তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেন, বিএনপির তো পাঁচটি অসুখ। আর এখনাকার নগরসেবির তিনটি অসুখ। এক, স্বজনপ্রিয়তা। যেখানে তিনি নগর, নাকি নাগর প্রেমে মজেছেন তা নিয়ে সব পর্যায় থেকে খতিয়ে দেখে অসুখ সারাতে হবে। উন্নয়নের নামে ব্যক্তি বিশেষকে দিয়ে তিনি লুটপাটের রাজনীতি করছেন না, তা এখন কি বলা যাবে ? সারাদেশ যেখানে একজন শেখ হাসিনার উন্নত নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন তিনি তাঁর সঙ্গে তাল মিলিয়ে না চলতে পারা অন্যতম ব্যর্থ রাজনৈতিক সত্তা। তিনি নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন। অনেকটাই বেগম জিয়ার মত করে। মোসাদ্দেক আলী ফালুর কাছে টাকা জমা রেখে। আজ কোথায় সেই ফালু ? দুই, তিনিই শুধু ভাল, অন্যরা কালো। তাঁর মজ্জাগত অভ্যাসের মধ্যে রয়েছে এমন কৃষ্টি। অন্যকে মন্দ বলতে গেলে নিজের চেহারটাকেও আয়নার সামনে দেখুন। তখন শরীরের রঙটাও কালো দেখতে পারবেন আবার আপনার মনটাও কালো হিসাবেই প্রতিভাত হয়। আপনি দুই ধরণের রাজনৈতিক শক্তির সাথে সখ্যতা রেখে রাজনীতি করছেন। মৌলবাদী শক্তির সাথে এবং কথিত বাম ধারার বলয়ের সাথে। এমন কি ২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে যখন আমাদের কয়েকজন শীর্ষ নেতা এই নারায়ণগঞ্জে এলেন, আপনি বেগম জিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা বললেন, সেদিন থেকে কি আপনি আওয়ামী লীগের লোক হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতে পারেন কি ? এখন ইতিহাসের সত্য ধারাভাষ্য দেয়ার সময় হয়েছে। সবাইকে তা জানাতে হবে। দেশের স্বীকৃত একজন গবেষক হিসাবে বলছি, আপনি প্রয়োজনে স্বাধীনতা বিরুদ্ধ শক্তির সাথে হাত মেলান এবং এহেন কিছু নেই যে, আপনি করতে পারেন না আপনি ব্ল্যাক ম্যাজিকও করেন। তিন, নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠকিয়েছেন। এই শহরটি আজ থেকে ১২ বছর আগেও যা ছিল, এখনও সে অবস্থাতেই আছে। কোথায় সবুজ নারায়ণগঞ্জ ? কোথায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সেই নগরী ? আপনি ব্যর্থ। আপনার মেয়াদ পূর্তির সুযোগ দেয়া হবে না বলে আমি মনে করি। নিশ্চয়ই জয় বাংলা নাগরিক কমিটি তা পরখ করে যথাযথ সিদ্ধান্তে বা কর্মসূচীতে যাবেন। আপনি বাম বলয়কে নিয়ে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করেন। কাউকে খুনী বলবার আগে নিজেই ভাড়াতে গুন্ডা দিয়ে কি কি করছেন জানা আছে। কাজেই শহর রক্ষার আন্দোলনে যারা এই নগরীকে রাত্রে পাহারা দিচ্ছে তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাবেন না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি তাঁরাও এখানে নৈশ প্রহরী হয়ে জনস্বার্থের রাজনীতি করছেন। তাঁদের দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে না। পত্রিকার পাতায় নীরিহ ইমেজ দেখে মনে করবার সুযোগ সৃষ্টি হয় না যে, আপনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি কিংবা অন্যান্য অপরাধের সাথে যুক্ত নন ।
নাসিম তাই নারায়ণগঞ্জবাসীকে বলেন, এই শহরের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের জায়গা দেয়া যাবে না। তাঁদের কে রাজপথেই প্রতিরোধ করতে হবে। অথচ তাঁদেরকে কাউন্সিলর বানিয়ে সেলিনা হায়াত আইভি কি করছেন তা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে। সাহস থাকলে প্রতিপক্ষ দলের কাউকে পাশে বসিয়ে বলেন যে, ইনি ভাল লোক। আমি তো অন্য একটি রাজনৈতিক বলয়ের। তাহলে কেন জয় বাংলা নাগরিক কমিটির মনোনীত সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর পাশে প্রত্যক্ষ ভাবে দাঁড়ালাম। এটাকে সৎ সাহস বলে। কিন্তু চ্যালেঞ্জ একটা ছুঁড়ে দিয়েছেন সেলিনা হায়াত আইভিকে। তিনি ২২ আগস্ট নিজেই চাষাড়া চত্বরে বিএনপির সভা ডেকে বলেছেন, পারলে ঠেকাও।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক মোশ্তাক আহমেদ ও কামরুল ইসলাম বাবুসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সংবাদ সম্মেলনের আগে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্মুখে তাঁরা বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপ্ক্ষ আমাদেরকে আটকাতে চাইছে। কিন্তু কতদিন ?
বাবু বলেন, একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে নারায়ণগঞ্জের জন্য অসাধারণ কিছু চিন্তা করছি। সময় বলবে, এখানকার মানুষ আমাকে ভালবাসতে পারলো কিনা।
প্রসঙ্গত,“২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা দাবি করে আলোচনায় আসেন কামরুল হাসান নাসিম। তিনি সে সময় বিএনপির পাঁচটি অসুখ আছে বলে আলোচনায় আসেন। অসুখগুলো হল, দলটি জাতীয়তাবাদী থেকে জামায়াতেবাদী হয়ে পড়েছে, নাশকতাকে রাজনীতির হাতিয়ার করা হচ্ছে, বিদেশি শক্তির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, জনস্বার্থ সংরক্ষণে রাজনীতি করা হচ্ছে না এবং দল পরিচালনায় বেগম জিয়া ও তারেক রহমান ব্যর্থ।
এরপর দলের কার্যালয় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বেগম জিয়া পন্থী ও নাসিমের অনুসারীদের মধ্যে ২০১৬ সালে মোট চারবার সংঘর্ষ বাঁধে। কারণ, নাসিম ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদলার বসান জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে। এই প্রতীকী আদালত থেকে তিনি দু’টো রায় পান। এক, দলের গঠনতন্ত্র স্থগিত করা। দুই, দলের পুনর্গঠন স্বার্থে কেন্দ্রিয় কার্যালয়ের সাম্নেইবসবে উচ্চ আদালত। তখন গেল ২০ বছরের কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে। যা নিয়ে বিরোধ চলে আসছে।“
নাসিমকে বিএনপির বিদ্রোহী নেতা হিসাবে ধরা হয়। তিনি পেশায় সাংবাদিকতার পাশাপাশি সংস্কৃতি অঙ্গনে নিজেকে আলাদা করে তুলে ধরতে পেরেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে আগভাগেই তিনি জানিয়েছিলেন যে, তিনি নারায়ণগঞ্জে যাচ্ছেন ।
নাসিমের বক্তব্য শেষ হবার পর পরই জয় বাংলা নাগরিক কমিটির পক্ষে মোশতাক আহমেদ ঘোষণা দেন, মেয়াদ পূর্তির আগেই সেলিন হায়াত আইভির পদত্যাগ করতে হবে। এই পদত্যাগের দাবীতে ২৩ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত অর্ধ দিবস হরতালের ডাক দেয়া হল।"
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন