নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের বক্তব্যের জবাব এসেছে এ আসনের বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের কাছ থেকে যে দুইজন ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন। ওই নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিন জিতে যান। শামী ম ওসমান গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১২টি হত্যাকা-ে গিয়াসউদ্দিনকে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ওই বক্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন গিয়াসউদ্দিন। সবশেষ ২০ মার্চতোলারাম কলেজের নবীণ বরণ অনুষ্ঠানে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, যদি এ ভদ্রলোক (গিয়াসউদ্দিন) সত্যিকারের কাপুরুষ না হয় তাহলে তার জবাব দেওয়া উচিত আওয়ামী লীগের কোন গ্রুপের সদস্যরা চায় না আওয়ামী লী গ ক্ষমতা য় না আসুক সেটা প্রকাশ করুক। গিয়াসউদ্দিন সাহেব আমার বড় ভাই। আমার মামা শ্বশুর হন সম্পর্কে। ১০ বছর কোন খবর ছিল না। এখন মাঠে নেমেই উচ্ছৃঙ্খল স্লোগান দিচ্ছেন। জাতির জনক ও তার কন্যাকে নিয়ে খারাপ গালি দিচ্ছেন। ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নিউজ নারায়ণগঞ্জে র এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের ভালো গ্রুপ চায় শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় না আসুক এই কথার প্রসঙ্গে গিয়া সউদ্দিন বলেন, তিনি আমার ওই কথাটা বুঝতে পারে নাই। আমি বলেছি সরকারি দলের ভালো লোকও আছে আবার খারাপ লোকও আছে। খারাপ লোক চাঁদাবাজি করে, অসৎ উপায়ে অর্থউপার্জন করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে। আর ভালো যে গ্রুপটি রয়েছে তাদের এই খারাপ গ্রুপটার সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। খারাপদের কারণে তারা লজ্জিত। তারাও চায় এই অবস্থার অবসান ঘটুক। সুস্থ ধারার রাজনীতি হোক এটা তারাও চায়। কিন্তু তারা সংখ্যায় কম। আমি এই কথাই সেদিন বলেছিলাম। গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘তার (শামীম ওসমান) কথাবার্তা এখন আউলিয়ে গেছে। তিনি এখন খেই হারিয়ে ফেলেছেন। ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীত গায়। কারণ তিনি এখন বিভিন্ন স্কুল কলেজে ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষকগণের সামনে তার প্রতিপক্ষকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছে। আমার মনে হয় না সে সুস্থ কোনো বিবেক নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে। ‘‘বিভিন্ন কর্মকান্ডে তিনি সাধারণ মানুষ থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণে এইসব কথা বলছেন। সামনে নির্বাচন, এই নির্বাচনের ভীতি তা কে পেয়ে বসেছে। কারণ তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হেরেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আমার কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিলেন। তিনি শুধুহারেনই নাই, ভয় পেয়ে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সেদিন তিনি তার নেতাকর্মীদের কথা ভাবেন নাই। তিনি জনপ্রতিনিধি হলেও তিনি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না। ২০১৪ সালের নির্বাচন ভোটারবিহীন, ২০১৮ সালের নির্বাচন দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এর ফলে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিনি যে আন্দোলন-সংগ্রাম দেখছেন তা দেখে তিনি ভয় পাচ্ছেন। তিনি জানেন, সে জনগণের কাছে কতটুকু প্রিয় বা অপ্রিয়। সেজন্য সে খেই হারিয়ে ফেলেছে।’’ বক্তব্যে যোগ করেন গিয়াসউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি তার দলের যার কাছে হেরেছিলেন তিনি এখন তার বিরুদ্ধেই কথা বলছেন। ওই জায়গায় আমি হলাম তার প্রতিপক্ষ দলের। তাই আমার বিরুদ্ধে সে কথা বলবে এটাতো স্বাভাবিক বিষয়। আমাদের দুজনের বিরুদ্ধে তিনি এখন কথা বলছেন কারণ আমাদের সাথে পরাজয়ের গ্লানি সে এখন ভুলতে পাচ্ছে না। শামীম ওসমান আরো বলেন, আমাদের সুন্দর আলী ভাইকে মারিয়েছেন, নজরুল ইসলাম সুইট, জাফর, মাসদাইরের সেলিমকে মারিয়েছেন। আমাদের ১০ থেকে ১২ জনকে তিনি হত্যা করিয়েছেন। আমাদের বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ছোট ভাই সাব্বিরকে হত্যা নিষিদ্ধপল্লীর ছেলেদের দিয়ে হত্যা করিয়েছিলেন। তিনি সেই লোক। তিনি মি শনপাড়ার ডেভিডকে হত্যা করিয়েছিলেন। কারণ ডেভিড তার কন্ট্রোলে ছিল না। সে ছিল অন্য গ্রুপের। ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে গিয়াসউদ্দিনন বলেন, ‘সে (শামীম ওসমান) সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় সে যদি নিশ্চিত জানে এইসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে আমি লেশমাত্র জড়িত তাহলে সেতো এতোদিনে আমাকে ফাঁসি দিয়ে দিতো। এই সরকারের আমলে অনেক হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। অনেক হত্যার রায় হয়েছে। যেমন আমাদের সিদ্ধিরগঞ্জের আলোচিত কয়েকটি হত্যাকান্ডের রায় হয়ে গেছে যেগুলো কথা তিনি এখনো বলে। তিনি আবার সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাকান্ডের কথা বলে। সেটিতো বিচারাধীন রয়েছেন। তার দলই তো ক্ষমতায় রয়েছে। আর উনি যদি এতোই শিউর হন আমি এইসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়ি ত ছিলাম তাহলে সে আদালতে গিয়ে সাক্ষী দেক। প্রমাণ করতে পারলেই আমাকে সে শায়েস্তা করতে পারে। আমাদের বিরুদ্ধে এতো মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার যে করছে তারপরও আমরা এই নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের কথা ভুলে গিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে ঘুমাই না। এখনো নারায়ণগঞ্জে আছি।’
গিয়াসউদ্দিন বলেন, তিনি এখন যে কতো দৈন্যদশায় রয়েছে। তা তার কথাবার্তায় বুঝা যায়।সে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পর বলে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তাহলে এই ১৪ বছর সে কি করেছিল? মা দক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি সবই তো এখন তার পরিবারের সদস্য কিংবা তার ছত্রছায়ায় যারা রয়েছে তারাই করছেন। সামনে নির্বাচন তাই এখন এগুলো বলে জনগণের সামনে যেতে চাচ্ছে। জনগণের সামনে যেতে হলে স্কুল-কলেজ নিয়ে নয় রাজনৈতিকভাবে যেতে হয়। নারায়ণগঞ্জের মানুষ তার সম্পর্কেভালো করে জানে । কাজেই আমি তাকে নিয়ে এখন কিছুবলি না। আমি তাকে বলি এগুলো বাদ দিয়ে সুস্থ ধারার রাজনীতি করুন।’
গিয়াস আরও বলেন, খেলা হবে, খেলা হবে এইসব কথা আর বইলেন না। খেলছি শিশুকালে, খেলছি কৈশোরকালে, খেলছি যুবককালে এখন তো খেলার সময় না। এখন জনগণের জন্য কাজ করার সময়। আসেন সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করি। জনগণ যাকে নির্বা চন করবে সেই নেতা হবে। এই বয়সে কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলে স্ট্যান্টবাজি রাজনীতি করার কোন প্রয়োজন তো নেই। রাজনৈতিক অঙ্গনে তা র এখন কথা বলার তো কোনো ক্ষেত্র নে ই। কারণ তার দলের লোকেরাই তার বিরুদ্ধে কথা বলে। তার কর্মকান্ড কারো কাছে গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় তার দলের লোকেরাই এখন তার বিরুদ্ধে। সেজন্য সে পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে গিয়ে পলিটিক্যাল বক্তব্য রাখতে পারছে না। সে স্কুল কলেজে গিয়ে এইসব বক্তব্য দেয়। কতোটা নৈতিক অবক্ষয় ঘটলে সে ছাত্রছাত্রীদের সা মনে এইসব বক্তব্য দেয়। এইসব কথা কি এইসব জায়গায় বলার জায়গা। আমাদের ছেলেমে য়েরা পড়ালেখা করবে। তারা নেতার আদর্শগ্রহণ করবে। সেখানে সেখানে সে মিথ্যা রাজনৈ তিক বক্তব্য দিচ্ছে। একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন গীবত করছে। স্কুল-কলেজে গিয়ে শিক্ষার কথা বলবে, নৈতিকতার কথা বলবে, কিভাবে ভালো মানুষ হওয়া যায়, কি ভাবে পড়ালেখা করবে, কীভাবে ভালো মানুষ হওয়া যাবে, সে কথা বলবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন