এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনে নৌকার দাবী জানিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। একাদশ নির্বাচনে সদর-বন্দর এবং সোনারগাঁ আসন থেকে নৌকার প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জোর দাবি তোলা হয়। সেই মতে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী তাদের তৃণমূলের সাথে তাল মিলিয়ে নৌকার দাবি তুললে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের অনেকেরই ধারণা ছিল হয়তো এবার এই আসন দুটি থেকে নৌকার প্রার্থী দিবেন। আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা বেশ জোর দিয়েই বলেছিলেন জাতীয় পার্টিকে নারায়ণগঞ্জের কোন আসনেই ছাড় দেয়া হবে না। কিন্তু ২০১৮ সনের নির্বাচনের পর থেকে জেলা ৫টি আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য জোরালো ভাবে দাবী জানিয়ে আসছেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মীদের। ২০২২ সনের জানুয়ায়িরর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে জোড়ালো ভাবে নৌকার দাবী তুলে ধরেন। জেলা মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিভিন্ন সভায় তারা নৌকার দাবী জানান। এমনকি জাতীয় পার্টির উপর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতারা ভর করে থাকতে চান না। বিশেষ করে সদর-বন্দর আসনে নৌকায় ভোট দিতে চান এখানকার স্থানীয় নেতারা। তবে তাদের এই দাবী চলমান থাকলেও সম্প্রতি সময়ে এই দাবীতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ নিরব রয়েছে। দলীয় সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ মানেই উত্তর দক্ষিন মেরুতে বিভক্ত।
ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের অনুসারীদের উত্তর মেরু হিসেবে জানেন। তাদের বিপরীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী অনুসারীদের চিনেন। স্থানীয় ভাবে দলীয় মনোনয়ন, কমিটি গঠনেও তাদের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া দুুই জনপ্রতিনিধির অনুসারীদের মাঝে তাদের নিয়ে কোন্দল থাকে। যা বিভিন্ন নির্বাচন আসলেই প্রকাশ্যে আসে। জানা যায়, সদর-বন্দর আসনে নৌকার প্রার্থী দেয়ার জন্য জোড়ালো ভাবে দাবী তুলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আন্য়োার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা। এমনকি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও জোড়ালো ভাবে নৌকার দাবী জানান। বিভিন্ন সভা সমাবেশে ২০১৮ সনের নির্বাচনের পর থেকে তারা জেলার ৫টি আসনে জোড়ালো ভাবে নৌকার দাবী জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি সময়ে বিভিন্ন সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, তারা সদর-বন্দর আসনে নৌকার ভোট দিতে চান। এখানে জাতীয় পার্টির এমপি থাকায় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা অবহেলিত হয়ে রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেন। তাই তারা নৌকার প্রার্থী চান। এছাড়া তিনি নিজেও নৌকার মনোনয়ন চেয়ে বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু জানান, নারায়ণগঞ্জে ৫টি আসনে নৌকার দাবী জানিয়ে আসছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে। জাতীয় পার্টির উপর আর ভর করে থাকতে চান না। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদু হাইও একই দাবীর সাথে একমত প্রকাশ তা জোরালো ভাবে দাবী জানান। এছাড়া জাতীয় পার্টির এমপিদের নিয়ে বিভিন্ন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা প্রত্যেকেই দক্ষিন মেরুর লোক হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল এবং মহাগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহাও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নৌকার দাবী তুলেন। তবে আওয়ামী লীগের জোটে থাকা কাউকে প্রার্থী দিলে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সম্প্রতি তারা নৌকার দাবীতে নিরব রয়েছেন। আগে যতটা জোড়ালো ভাবে বলতেন এখন তেমন ভাবে দাবী তোলা হচ্ছে না। তাছাড়া তারা দুজনেই উত্তর মেরুর সাংসদ শামীম ওসমানের বন্ধু হিসেবে পরিচিতি। হঠাৎ করে উত্তর মেরুর নেতৃবৃন্দ নৌকার দাবীতে নিরব হওয়া দলয়ী রাজনীতি মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, উত্তর মেরুর নেতৃবৃন্দ ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ায় নিরব রয়েছেন। অপরদিকে দক্ষিণ মেরুর আইভী অনুসারীরা নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে নৌকার দাবীতে সোচ্চার রয়েছেন। বিশেষ করে সদর-বন্দর আসনে তারা কোন ভাবে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। তাই রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে সদর-বন্দর আসনে নৌকার দাবীতে উত্তর মেরু নিরব হলেও দক্ষিণ মেরু সরব রয়েছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন